মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবময় ঘটনা। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই আমরা লাভ করেছি স্বাধীন দেশ, নিজস্ব পতাকা। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বাংলার ছাত্র-যুবক, কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণ বর্বর হানাদার পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। তারই পরিণতিতে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে খোদিত হয় একটা নাম- ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ’।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে যাঁরা অস্ত্র হাতে সরাসরি পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন কেবল তাঁদেরই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হয় তা নয়। সেই সঙ্গে অস্থায়ী মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রী, সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলোতে ত্রাণ বিতরণসহ যাঁরা বিভিন্ন সেবামূলক কাজে অংশ নিয়েছেন তারা, কোলকাতায় স্থাপিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পরিচালকমণ্ডলী, সাংবাদিক, ভাষ্যকার ও শিল্পী, প্রমুখকেও মুক্তিযোদ্ধা হিসাব তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে।
১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা প্রাপ্তি বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন। এ যুদ্ধে খুলনা বিভাগের মানুষের অবদানও কম ছিল না। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে স্বাধীনতার রক্তসূর্য ছিনিয়ে আনার সংকল্প নিয়ে এখানকার হাজার হাজার মানুষ তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তারা বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছে। তাঁরা তাঁদের জীবনের বিনিময়ে পরম প্রার্থিত প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা উপহার দিয়ে যান।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে খুলনা বিভাগের অবদান কম নয়। খুলনা বিভাগের মুক্তিযুদ্ধ সার্বিক মুক্তিযুদ্ধের সাথে বিচ্ছিন্ন কোন ব্যাপারও নয়। তবু সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ একই সূত্রে গ্রথিত হলেও এ এলাকার লড়াইয়ের নিজস্ব একটা স্বকীয়তা রয়েছে। ভৌগলিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে শত্রুপক্ষের হামলা ও তার প্রতিরোধ প্রচেষ্টার মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র্য থাকাই স্বাভাবিক। খুলনা জেলার বড় অংশ ছিল নবম সেক্টরভুক্ত। খুলনায় মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস অনবরত যুদ্ধ চলে। এখানে যেমন গেরিলা যুদ্ধ তেমনি হয় সম্মুখ সমর। প্রলয়ংকরী ট্যাংক যুদ্ধও হয় এখানে। এ যুদ্ধে এখানে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে যা সহজেই চোখে পড়ার মতো। প্রথমতঃ খুলনার সাতক্ষীরা থেকে ব্যাংক অপারেশনের মাধ্যমে উদ্ধারকৃত এক কোটি পচাত্তর লক্ষ টকা নিয়েই নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের যাত্রা শুরু হয়। দ্বিতীয়তঃ ১৬ই ডিসেম্বর পাক বাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করলেও খুলনায় তা ঘটে একদিন পর, ১৭ই ডিসেম্বর। তৃতীয়তঃ এখানে শিরোমনি নামক স্থানে সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক ট্যাংক যুদ্ধ যা ছিল একটা অনন্যসাধারণ ঘটনা। এমন ট্যাংক যুদ্ধ দেশের অন্যত্র খুব কমই ঘটেছে।
বীরমুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা দেখতে তালিকা
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস